জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যকে সাধুবাদ জানালেও দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের রোডম্যাপের দাবি জানিয়েছেন বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। শনিবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপি’র প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে কয়েক হাজার নেতাকর্মীকে নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন মির্জা আব্বাস।

তিনি বলেন, আমি প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যটা শুনি নাই, আপনার মুখেই যেটা জানলাম- উনি যেটা বলেছেন, যথার্থ বলেছেন। নির্বাচনে যারা পার্টিসিপেট করবে, যারা অংশীজন তারা যদি চায় তিনি যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেবেন, সাধুবাদ জানাই। কিন্তু এর বাইরে কোনো কথা কারও নাই। আর সংস্কার একটা বিষয়, এটা যুগ যুগ ধরে চলবে, এটা নতুন কিছু না। এটা হঠাৎ করে, এটা একটা প্যাকেট না, একটা প্যাকেটে করে এনে আমি সংস্কার হয়ে গেলাম। এটা সময়ের বিবর্তনে, সময়ের চাহিদায় সংস্কার প্রয়োজন হয়। আমরা আশা করছি, এই সরকার দ্রুততম সময়ে জনগণের ভোটের অধিকার জনগণের হাতে ফেরত দেবে- এটাই আমাদের কাম্য।

তিনি বলেন, এদেশের মানুষ ভোটের অধিকার চায়। আমরা শুনেছি, আমরা দেখেছি, ভোটের কথা বললে, নির্বাচনের কথা বললে অনেকের মুখ বাঁকা হয়ে যায়। আমরা পরিষ্কার বলতে চাই, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব পরিষ্কার বলেছেন, আমাদেরকে কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে, এটা একটু আমাদেরকে জানিয়ে দিন। আমরা অপেক্ষা করতে রাজি আছি, সংস্কার হবে, অপেক্ষা করবো। কিন্তু যুগ যুগ ধরে এভাবে চলতে পারে না। আজকে দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ, আজকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে নাভিশ্বাস উঠেছে মানুষের, মানুষ আজকে বাঁচার আশ্রয় খুঁজছে। মানুষ কথা বলতে পারছে ঠিকই কিন্তু দেশের মানুষের অভাবের তাড়না রয়ে গেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নির্বাচিত সরকার না আসবে ততক্ষণ পর্যন্ত এই সমস্যার কোনো সমাধান হবে না। আমরা চাই, এই সরকার একটা রোডম্যাপ ঘোষণা করুক।

মির্জা আব্বাস বলেন, একজন উপদেষ্টা কয়েকদিন আগে বলেছেন, আমি তার জবাব দিতে চাই না, তিনি বলেছেন, ৫৩ বছর রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ কী করেছেন? আমি বলতে চাই, আপনি রাজনীতি করেন নাই, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সম্পর্কে একটু দয়া করে সম্মান নিয়ে কথা বলবেন। একজন রাজনীতিক একদিনে তৈরি হয়ে যায়নি। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান কিংবা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কিংবা এখানে যারা দাঁড়িয়ে আছেন, এরা একদিনে তৈরি হয় নাই। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা যা বলেন, তাদের কথাগুলো বুঝার চেষ্টা করেন, মানার চেষ্টা করেন। এই কথা ভাববেন না যে, আমরা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য লড়াই করি। ক্ষমতায় যাওয়ার কথা আমরা কখনো বলি না, আজও বলি নাই, কখনো বলবো না। আমরা চাই, জনগণের ভোটের অধিকার, আমরা চাই, জনগণের শাসন।
তিনি বলেন, যদি এর সঙ্গে নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং নির্বাচন সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে এবং জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতে প্রত্যাশিত মাত্রার সংস্কার যোগ করি তাহলে অন্তত আরও ছয় মাস অতিরিক্ত সময় লাগতে পারে। মোটা দাগে বলা যায়, ২০২৫ সালের শেষদিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।

বিজয় দিবসে বিএনপি’র প্রত্যাশা কী জানতে চাইলে মির্জা আব্বাস বলেন, এই বিজয় দিবসে আজকে যে জনগণের ঢল, আমি এত বছর আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু থেকে এ যাবৎকাল, সেই আমাদের বিজয় স্তম্ভ, জাতীয় সৌধ সাভারে গেছি, এই মাজারে (জিয়াউর রহমানের সমাধি) এসেছি বহুবার, কিন্তু আজকের মতো এরকম জনগণের ঢল আমার জীবনে আমি কখনো দেখিনি। এর একটাই মাত্র কারণ জনগণের বাধভাঙা উল্লাস। এদেশের মানুষ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। এদেশের মানুষ চায় এক স্বৈরাচার মুক্ত করে আমরা জনগণ যেন আর কোনো স্বৈরাচারের হাতে না পড়ি।
বিজয় দিবস উপলক্ষে নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, আজকে আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। দেশের মানুষ দেশের জনগণকে এ বিজয় উৎসব পালন করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেবের পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্বাচন নিয়ে বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের একটি ধারণা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপি ধারণা নয়, নির্দিষ্ট রোডম্যাপ চেয়েছে।

এসময়ে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মাসুদ আহমেদ তালুকদার, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, কামরুজ্জামান রতন, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুল আলম নিরব, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, মহানগর উত্তর বিএনপি’র আহ্বায়ক আমিনুল হক, দক্ষিণের সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিন, যুবদলের সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নাসহ দলের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।